উত্তরের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল |
উত্তরের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল
➡️ভারত যখন মাদাগাস্কার দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উত্তর দিকে যাত্রা করছিল, তখন স্টেথিস সাগর অতিক্রম করার সময় ইউরেশিয়ার সঙ্গে ধাক্কা লাগে, এই চাপে স্টেথিস সাগর পলি দিয়ে সৃষ্টি হয় ভঙ্গিল পর্বত। পরে এই পর্বতের নাম হয় "হিমালয়"। এখনো পলি সঞ্চয় ও মহাদেশীয় পাত সঞ্চালনের ফলে হিমালয়ের উচ্চতা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে, এর জন্য হিমালয়কে পৃথিবীর অন্যতম "নবীন ভঙ্গিল পর্বত" বলা হয় ।
➡️ হিমালয়ের অধিকাংশ শৃঙ্গ সারা বছর বরফে ঢাকা থাকে। তাই এই পর্বত শ্রেনীর নাম হয়েছে "হিমের আলোয়" বা "বরফের ঘর"।
➡️ পৃথিবীর সর্বোচ্চ গ্রন্থি "পামির "( হিন্দুকুশ, হিমালয়, তিয়ান সং ও কুলুন সং এর মিলিত রূপ) এটি হিমালয়ের রেঞ্জ কে, মধ্য এশিয়ার সাথে যুক্ত করেছে।
➡️ভারত যখন মাদাগাস্কার দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উত্তর দিকে যাত্রা করার সময় যাত্রাপথে অগ্নুৎপাত চলত (Hotspot Activity) সেই অগ্নুৎপাত ভারতের উত্তর অংশে জমতে থাকে, ওই অগ্নুৎপাতের লাভা দিয়ে তৈরি হয় কারাকোরাম পর্বত। এর জন্য কারাকোরাম পর্বত শ্রেণীর রং কালো হয় এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ "গডউইন অস্টিন" বা "K2"(8611 মিটার)
➡️ হিমালয় ভারতের জম্বু কাশ্মীরের নাঙ্গা পর্বত (8126) থেকে অরুণা অঞ্চল প্রদেশের নামচাবারোয়া (7756) পর্যন্ত বিস্তৃত (নামচাবারোয়া অরুণা অঞ্চল প্রদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ)।
➡️ হিমালয় পশ্চিমে সিন্ধু থেকে পূর্বের ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত 2500 কিমি বিস্তৃত।
হিমালয়ের ভাগ :
হিমালয় কে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয় 1.প্রস্ত বরাবর ও 2.দৈর্ঘ্য বরাবর ।
1. প্রস্ত বরাবর হিমালয়ের ভাগ:
প্রস্ত বারবার ভারতের ভূপ্রকৃতি কে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
ক. উচ্চ হিমালয় বা হিমাদ্রি :
➡️ মহাদেশীয় পাত সঞ্চালনের ফলে (ভারত ও এশিয়া) পাতের সংঘর্ষের ফলে হিমালয়ের বেশ কিছু অংশ চূর্ণ হয়ে দুই পাতের সংঘর্ষে ফলে উত্থিত হয় এই অংশের নাম হয় উচ্চ হিমালয় বা হিমাদ্রি ।➡️ ভূগর্ভের পাথর চূর্ণ হয়ে উচ্চ হিমালয় সৃষ্টি হয় বলে এখানে গ্রানাইট নিস্ট সিস্ট জাতীয় উপাদানে ভরপুর ।
➡️ সারা বছরে বরফে ঢাকা থাকে বলে এই অংশের নাম হিমাদ্রি বা হিমগিরি বলা হয় ।
➡️ হিমাদ্রির গড় উচ্চ 6000 মিটার এবং চওড়া 25 কিমি ।
➡️ এই অংশে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ গুলি অবস্থিত যেমন
- মাউন্ট এভারেস্ট (8854) এটি নেপালে অবস্থিত এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ
- কাঞ্চনজঙ্ঘা (এটি ভারতে অবস্থিত সব থেকে বড় পর্বত শৃঙ্গ)
- ধবলগিরি (8172
- অন্নপূর্ণ (8078)
- নন্দা দেবী (7817)
খ. মধ্য হিমালয় বা হিমাচল :
➡️হিমাদ্রি তৈরি হওয়ার পর মধ্য হিমালয় তৈরি হয়। মহাদেশীয় পাত সঞ্চালনের ফলে মধ্য হিমালয়ে রেঞ্জ গঠিত হয়েছে।➡️মধ্য হিমালয়ের উচ্চতা 1500-5000 মিটারের ভিতর হয় এবং প্রস্থ 60-80 কিমি হয় ।
➡️উল্লেখযোগ্য রেঞ্জগুলি হল
- পিরপঞ্জাল
- ধৌলধর
- মহাভারত
গ. বহি হিমালয়/ শিবালিক :
➡️উচ্চ হিমালয় ও মধ্য হিমালয় তৈরি হওয়ার পর, সেই হিমালয় থেকে বহু নদীর উৎপত্তি হয়। ওই নদীর মাধ্যমে পর্বতের বিভিন্ন নুরি, পলি, শিলা ইত্যাদি পর্বতের পাদদেশে জমা হতে থাকে। পাত সঞ্চালনের সময় এই নুরি শিলা পলি উত্থিত হয়ে ছোট ছোট পাহাড় উৎপন্ন হয়, এই পাহাড়গুলি বহি হিমালয়/ শিবালিক নামে পরিচিত।➡️বহি হিমালয়/ শিবালিকের গড় উচ্চতা 300-1500 মিটার হয় এবং প্রস্থ 10-15 কিমি হয়।
2.দৈর্ঘ্য বরাবর হিমালয়ের ভাগ :
দৈর্ঘ্য বরাবর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে হিমালয় কে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয় ।
দৈর্ঘ্য বরাবর হিমালয়ের ভাগ |
ক. পশ্চিম হিমালয় :
➡️ পশ্চিম হিমালয় সিন্ধু নদ থেকে নেপালের কালী নদী প্রযন্ত প্রায় 880 কিমি পশ্চিম হিমালয় বিস্তৃত। এটি লাদাখ, কাশ্মীর, পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, হিমাচোলপ্রদেশ জুড়ে বিরাজমান। পশ্চিম হিমালয় আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
A. কাশ্মীর হিমালয়:
➡️কাশ্মীর হিমালয়, কাশ্মীর ও লাদাখ পর্যন্ত বিস্তৃত, এর গড় উচ্চতা প্রায় 3000 মিটার, এখানে দক্ষিণ দিকে পূর্ব দিকে বিভিন্ন পর্বত দেখা যায় যেমন পিরপঞ্জাল, হিমাদ্রি, জস্কার, লাদাখ কারাকরম ইত্যাদি।
➡️পিরপঞ্জাল ও জস্কার পর্বত শ্রেণীর মাঝে অসমান জায়গাগুলি পর্বত থেকে আগত নদী দ্বারা ভরাট হয়ে এক সুন্দর উপত্যকা সৃষ্টি করেছে এই উপত্যকার নামই কাশ্মীর উপত্যকা। এই উপত্যকা এতটাই সুন্দর এর জন্য এই উপত্যকার নাম ভূস্বর্গ বা প্রাচ্যের নন্দন নামে পরিচিত ।
➡️কাশ্মীর উপত্যকায় নদী প্রবাহিত হওয়ার সময় কিছু অংশ ধাপ ধাপ তৈরি হয় এটির নাম "করোয়া"এখানে জাফরান (saffron), বাদাম, আখরোট, ইত্যাদি চাষ ভালো হয়।
সেই উপত্যকার ভিতর দিয়ে বিতস্তা নদী (Jhelum) প্রবাহিত হয়েছে ।
➡️উল্লেখযোগ্য কিছু গিরীপথ
- পিরপঞ্জাল(লাদাক ও পাঞ্জাবের ভেতর যোগাযোগ স্থাপন করে)
- বানিহাল /জহর (জম্বু ও কাশ্মীরের ভেতর যোগাযোগ স্থাপন করে)
- জোজিলা (লাদাখ ও কাশ্মীরের ভিতরে যোগাযোগ স্থাপন করে)
➡️উল্লেখযোগ্য হ্রদ
- ডাল, উলার (সাধু জলের হ্রদ)
- প্যাঙ্গং (লবণাক্ত জলের হ্রদ)
B.উত্তরপ্রদেশ হিমালয়/কুমায়ুন হিমালয়:
➡️উত্তরপ্রদেশের গাড়োয়াল অংশে বিস্তৃত হিমালয় কে উত্তরপ্রদেশ হিমালয় বলে । হিন্দু মাইথোলজি অনুসারে বিষ্ণুর কচ্ছ বা কূর্ম অবতরের নাম অনুসারে এর নাম কুমায়ুন হিমালয় হয় ।
➡️এখান থেকেই গঙ্গা ও যমুনার উৎপত্তি হয়।
➡️উত্তরপ্রদেশ হিমালয়ের অনেক হ্রদ দেখা যায় যেগুলি ওখানে "তাল" নামে পরিচিত উল্লেখযোগ্য তাল গুলি হল
- নৈনিতাল
- ভীমতাল
- সাত তাল
- নাওকুচিয়া তাল
C. হিমাচল হিমালয় :
➡️হিমাচল হিমালয় মূলত হিমাচল প্রদেশে বিস্তৃত, এই অংশের তিনটি রেঞ্জ দেখা যায় ধলাধর, হিমাদ্রি, শিবালিক ।
এখানকার উল্লেখযোগ্য গিরিপথ গুলি হল
- রোটাং পাস
- সিপকিলা
খ. মধ্য হিমালয় :
➡️মধ্য হিমালয়টি কালী নদী থেকে তিস্তা পর্যন্ত বিস্তৃত। মধ্য হিমালয়ের প্রায় সব অংশ নেপালে অবস্থিত, এখানেই পৃথিবীর উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ "মাউন্ট এভারেস্ট" অবস্থিত ।
গ. পূর্ব হিমালয় :
➡️পূর্ব হিমালয়টি তিস্তা নদী থেকে ব্রহ্মপুত্র নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।
A. দার্জিলিং- সিকিম হিমালয়:
➡️এটি দার্জিলিং ও সিকিমের বিস্তৃত এখানে সান্দাকফু(3630 মিটার) পশ্চিমবঙ্গ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, ফালুট (3536 মিটার) সবরগ্রাম (3543 মিটার), নেপাল ও সিকিম সীমান্তে অবস্থিত কাঞ্চনজঙ্ঘা (8598) ভারতে অবস্থিত হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, ভারতের দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ এবং পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম । এর ৫টি চূড়া রয়েছে তাই একে "The Five Treasures of Snows" বলা হয় ।
B. অরুণাচল হিমালয় :
➡️এটি হিমালয়ের একদম পূর্বে অরুণা অঞ্চল প্রদেশ, মিজোরাম, মনিপুর এরপরে মায়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে । এই অংশে অবস্থিত নামচাবারোয়া(7756 মিটার) এটি অরুনা অঞ্চল প্রদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
উল্লেখযোগ্য গিরিপথ
- ডিহং-ডিবং ( অরুণা অঞ্চল প্রদেশ ও মায়ানমানের ভেতর যোগাযোগ রক্ষা করে) ।
ভারতে অবস্থিত হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম কি ?
কাঞ্চনজঙ্ঘা
কারাকোরাম পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম কি ?
গডউইন অস্টিন বা K2
ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম কি?
গডউইন অস্টিন বা K2