ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য
ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য |
ভারতীয় সংবিধান হলো বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ ও জটিল লিখিত সংবিধান । অন্যান্য দেশের লিখিত সংবিধানের তুলনায় ভারতীয় সংবিধান আয়তনের বড় ও বিষয়বহুল । এই সংবিধানে ৪৪৮ টি ধারা ও বহু সংখ্যক উপধারা নিয়ে গঠিত ভারতীয় সংবিধান । এটি হলো দেশের মৌলিক ও সর্বোচ্চ আইন, এর প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল।
ভারতের বর্ণনা:
প্রথমে সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও প্রজাতন্ত্র ছিল কিন্তু ১৯৭৬ সালে ৪২ তম সংবিধান সংশোধনীতে "সমাজতান্ত্রিক" ও "ধর্মনিরপেক্ষ" শব্দ দুটি যোগ হয়।
মৌলিক অধিকার:
সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায় ১২ থেকে ৩৫ নং ধারায় মৌলিক অধিকারের কথা উল্লেখ আছে, এতে বলা আছে যে এই দেশের সকল জনগণ কোন রূপ ভেদাভেদ ছাড়াই, মৌলিক মানবাধিকার দেওয়া হয়েছে একে মৌলিক অধিকার বলা হয় । ভারতীয় সংবিধানের ৭টি প্রকার মৌলিক অধিকারের কথা বলা আছে ।
- সাম্যের অধিকার ১৪ থেকে ১৮ নং ধারায় ।
- শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার ২৩ -২৪ নং ধারায় ।
- স্বাধীনতার অধিকার অধিকার ১৯ - ২২ নং ধারায় ।
- ধর্ম চরণের অধিকার ২৫ থেকে ২৮ নং ধারায় ।
- সাংস্কৃতি ও শিক্ষার অধিকার ২৯ ও ৩০ নং ধারায়
- সম্পত্তির অধিকার ৩১ নং ধারায় ।
- সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার 32 নং ধারায় ।
প্রস্তাবনা:
প্রস্তাবনা ভারতীয় সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। প্রস্তাবনার অর্থ হলো সংবিধানের ভূমিকা বা সংবিধানের অন্তর্গত যেসব আইন আছে সেইসব আইন গুলি মুখবন্ধ। প্রস্তাবনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবনার অনুকরনে সৃষ্টি। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা মাত্র একবারই সংশোধিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা:
ভারতীয় শাসন ব্যবস্থা হল যুক্তরাষ্ট্রীয় । অর্থাৎ কেন্দ্র ও প্রদেশের(রাজ্য) মধ্যে সংবিধানের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হয় তাকে যুক্তরাষ্ট্র শাসন ব্যবস্থা বলে ।
নীর্দেশমূলক নীতি :
ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকার ছাড়াও , আরো কিছু অধিকার কথা উল্লেখ আছে এইগুলি রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে নীর্দেশমূলক নীতি নামে পরিচিত। সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায় ৩৬ থেকে ৫১ নং ধারায় নির্দেশমূলক নীতির কথা উল্লেখ আছে। নির্দেশমূলক নীতিটি আয়ারল্যান্ড (আইরিশ) এর সংবিধান থেকে গৃহীত হয়েছে।
মৌলিক কর্তব্য:
মৌলিক সংবিধানের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল মৌলিক কর্তব্য সংবিধানের ৫১A নং ধারায় এর উল্লেখ আছে। প্রথমে মৌলিক কর্তব্যের সংখ্যা দশটি ছিল যেগুলি ছিল নন জাস্টিসিয়েবল, অর্থাৎ পালন করা আইনত দণ্ডনীয় নয়। কিন্তু ১৯৭৬ সালে ৪২ তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে, ভারতীয় নাগরিকদের জন্য আবশ্যিক পালনীয় দশটি কর্তব্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এবং ২০০২ সালের ৮৬ তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আরো একটি মৌলিক কর্তব্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে ভারতীয় নাগরিকদের পালনীয় মৌলিক কর্তব্য ১১ টি।
একনাগরিকত্ব :
ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকদের একনাগরিকত্ব স্বীকার করা হয়েছে। ভারতের অঙ্গরাজ্য গুলির আলাদা করে নাগরিকত্ব প্রদানের অধিকার নেই ভারতের জনগণ সারাদেশে সমান পৌর ও রাজনৈতিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন।
সুপ্রিম কোর্ট:
সংবিধান অনুসারে ভারতের একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত আছে এর নাম সুপ্রিম কোর্ট। সংবিধানের পঞ্চম অধ্যায় ১২৪ থেকে ১৪৭ নং ধারার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের বিষয়টি আলোচিত রয়েছে। ভারতের বিচার ব্যবস্থায় শীর্ষে রয়েছে এটি। ১৯৫০ সালের ২৮ শে জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের উদ্বোধন হয়।
স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ:
ভারতের বিচার বিভাগ যাতে নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে নিজের দায়িত্ব সম্পাদন করতে পারে, তার জন্য সংবিধানে বিচারের বিভাগীয় স্বাধীনতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিচারপতিরা যাদের নির্ভীক ও নিরপেক্ষভাবে বিচার কার্যসম্পন্ন করতে পারে, তার জন্য সংবিধানের ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।
সর্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকার:
ভারতীয় সংবিধানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের স্বীকৃতি । সংবিধানের ৩২৫ ও ৩২৬ নং ধারায় জাতি ,ধর্ম ,বর্ণ, সম্পত্তি ও লিঙ্গ ভেদে নির্বিশেষে ১৮ বছর বয়স্ক প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রদান করা হয়েছে।
কতগুলি রাজ্যের জন্য বিশেষ আইন:
সংবিধানের 370 নং তারাই কাশ্মীরের জন্য ( বর্তমানে তুলে নেওয়া হয়েছে)এবং ৩৭১ নং ধারায় আসাম, মনিপুর, সিকিম, নাগাল্যান্ড প্রভৃতি রাজ্যের স্বার্থে কিছু বিশেষ ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে।
সংসদীয় সার্বভৌমত্ব:
ভারতের সংবিধানে পার্লামেন্টের সর্বভৌমত্ব স্বীকার করা হয়েছে। ভারতীয় সংবিধান হলো দেশের মৌলিক ও সর্বোচ্চ আইন । এই সংবিধানের আইন সংশোধন কতার ক্ষমতা পার্লামেন্টের আছে ।
বিশ্বশান্তি আদর্শ :
ভারতীয় সংবিধানের এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো বিশ্ব শান্তির আদর্শ ঘোষণা করা।
সংসদীয় ব্যবস্থা :
কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় স্তরে ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে ইউনিয়নের শীর্ষে এবং রাজ্যপালকে রাজ্যের শীর্ষ পদে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তারা নিজে নিজে ক্ষেত্রে চূড়ান্ত কর্তৃক অধিকারী হলেও প্রকৃত শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা যথাক্রমে প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত রয়েছে।
ভাষা সংক্রান্ত ব্যবস্থা:
ভারতীয় সংবিধানের সপ্তদশ অধ্যায় ৩৪৩ থেকে ৩৫১ নং ধারার মধ্যে ভাষা সংক্রান্ত সাংবিধানক নির্দেশ উল্লেখ আছে। দেবনগরী হরফে হিন্দি ভাষা হল কেন্দ্রের সরকারী ভাষা হলো হিন্দি। প্রথমে অষ্টমতম তপশিলে ১৪ টি ভাষা থাকলেও পরবর্তীকালে, ২২ তম তপশিলে ৮টি সংযোজিত হয়। বর্তমানে ২২ টি ভাষা সংবিধানের স্বীকৃতি পেয়েছে।
দলত্যাগ বিরোধী ব্যবস্থা:
১৯৮৫ সালে ৫২ তম সংবিধান সংশোধনীর আইনের মাধ্যমে দলত্যাগ বিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।